পিঠা উৎসব রচনা

ভূমিকা

পিঠা উৎসব রচনা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব যা প্রতিবছর হয়ে থাকে। বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে শীতকালে উৎসব গুলোতে পিঠা নিয়ে আলাদা একটি আমেজ থাকে।

পিঠা-উৎসব-রচনা
ঐতিহ্য বাহি এই পিঠার উৎসব রচনা নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। আমরা আপনাদের একটি সুন্দর রচনা তৈরি করে দেখাব যা পড়লে বুঝতে পারবেন কত সুন্দর করে সাজান কথা গুলো।

পেজ সূচিপত্রঃ পিঠা উৎসব রচনা

পিঠা উৎসব রচনা

পিঠা উৎসব রচনা বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহী উৎসব গুলোর মধ্যে শীতকালের অন্যতম উৎসব পিঠা উৎসব। প্রতিবছর শীতকালে এই উৎসব হয়ে থাকে। গ্রামীন পরিবেশে খেজুরের রস সংগ্রহ করার সময় মানুষদের আনন্দ দেখা যায়। নতুন গাছের খেজুরের রসের সংগ্রহ গ্রামের বাড়িগুলোতে যেন উৎসব বয়ে আনে। টাটকা খেজুরের রস সংরক্ষণের সাথে পিঠা বানানোর এই উৎসব তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে এটি সুধু পিঠা খাবারের উৎসব নয় বরং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মিলনে প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

পিঠা উৎসবের সূচনা

পিঠা উৎসবের সূচনা হয়েছে প্রাচীন কাল থেকেই। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ পিঠা তৈরি করে আসছে এবং একে অন্যের সাথে করমর্দন করার পাশাপাশি পিঠার প্রচলন ঘটে আসছে। বিশেষ করে যখন শীতকাল আসত গ্রামীন মানুষ ধান থেকে চালের গুঁড়ো বের করত এবং খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করত এর দুই মিশ্রন ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরিতে ব্যাস্ত থাকত।

প্রাচীন কালে শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহতে ধুম পড়ে যেত মানুষ হাড়ি হাড়ি টাটকা রস সংগ্রহ করত এবং খাটি গুড় তৈরির সাথে তারা নারিকেল সংগ্রহ করত গুড় আর নারকেলের মিশ্রনে তৈরি করত সুঃস্বাদু পিঠা। গ্রামিন পরিবেশে তখন পিঠা তৈরিতে প্রতিযোগিতা লেগে যেত কে কত সুঃস্বাদু পিঠা তৈরি করেছে। প্রাচীন কালের মানুষ পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান করত এবং এই অনুষ্ঠানে পিঠা তৈরি করে উপহার হিসেবে দিত একে অন্যকে এইভাবেই উৎসবের সূচনা ঘটে।

পিঠার ঐতিহ্য

পিঠার ঐতিহ্যতে ভরা আমাদের বাঙ্গালী। বাংলার মানুষের এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি ঐতিহ্য এটি। এই ঐতিহ্য বাঙ্গালীদের জাতির পরিচয় বহন করে। জাতীর পরিচয়ে পিঠার ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রয়েছে তা কেবল মাত্র বাঙ্গালীরাই বুঝতে পারে। এই ঐতিহ্য ভুলে যাওয়ার ঐতিহ্য না প্রাচীনকাল থেকেই পিঠার ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে আসছি বাঙ্গালী। গ্রামে মেতে ওঠা পিঠার ঐতিহ্য গুলো পিঠার সেই পুরনো ঘ্রাণ আজ এই ইট পাথরের শহরে কোথায় যেন হারিয়ে যেতে চলেছে।

পিঠা উৎসবের বৈচিত্র

পিঠা উৎসব রচনার বৈচিত্র আয়োজন গুলোতে বিভিন্ন পিঠা দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি পিঠার নিজস্ব স্বাদ এবং বৈচিত্র রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উৎসবে পিঠা তৈরির আয়োজনরা এসে পিঠা তৈরি করতে ব্যাস্থ থাকে। পিঠার আকার ভঙ্গি একেক স্টাইলের যা দেখতে অনেক সুন্দর হয়। পিঠা দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও মজা। প্রধান উপকরণ হিসেবে চালের গুড়া, গুড় ও নারিকেল দিয়ে পিঠা তৈরিতে ব্যাস্থ থাকে সবাই। হরেক রকমের কারীগর উৎসব গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহি  আঞ্চলিক পিঠা পরিবেশন করে থাকে।

পিঠা তৈরির সময় ও স্থান

পিঠা তৈরির সময় ও স্থান আমাদের দেশে পিঠা তৈরিতে মেতে উঠে পৌষ ও মাঘ মাসে অথ্যাৎ ইংরেজি মাসের ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। এই সময়ে প্রচুর শীত পড়ে দেশের আবওহয়ায়। শীতকালের পৌষ মাসের শুরুতে পিঠা তৈরির রেওয়াজ দেখা যায়। তাছাড়া অন্যান্য সময়ে যেমন বিভিন্ন উৎসব সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব যেমন বর্ষবরণ, জন্মাষ্টামী, ঈদ ও পূজার সময় গুলোতে পিঠা তৈরি হয়ে থাকে।

গ্রাম ও শহর এই দুই ভেদে পিঠা তৈরির স্থান হয়ে থাকে। গ্রামে পিঠা তৈরির প্রচলন বেশি দেখা যায় কারণ প্রাচীন কাল থেকেই গ্রামীর পরিবেশ থেকেই পিঠা তৈরির প্রচলন সূচনা। গ্রাম থেকে পিঠা তৈরির প্রচলন শুরু থেকে শহরে চলে এসেছে এখন শীতকালে শহরের ঘরে ঘরেও পিঠা তৈরির প্রচলন দেখা যায়।শহরের বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোতে পিঠা তৈরি হয়ে থাকে সেই পিঠার স্বাদ নিতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের সমাগম দেখা যায় তাছাড়াও শীতকালে শহরের পিঠা তৈরির পাশাপাশি শহরের কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে পিঠার আয়োজন হয়ে থাকে।

পিঠার বিভিন্ন নাম

পিঠার হরেক রকমের নাম রয়েছে আমাদের গ্রামীন পরিবেশে নারীরা পিঠার তৈরির সময় থেকে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নাম দিয়েছে যা কালপরিবর্তন থেকে প্রচলন হয়ে আসছে নতুন নতুন পিঠার নাম।গ্রাম বাংলায় প্রচলিত পিঠার নাম গুলো হলো ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, চিড়াই পিঠা, নারিকেল পিঠা, দুধ চিতই, পুলি পিঠা, তেল পিঠা, নলেন গুড়ের পিঠা, ডিম পিঠা, কুলি পিঠা, কুশলি পিঠা ইত্যাদি আরো নানান রকম পিঠার নাম রয়েছে যা বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক  বিভিন্ন নামকরণ অনুরূপে দেখা যায়।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলন পিঠা গুলোর মধ্যে হলো ভাপা পিঠা, দুধ চিতই ও নকশি পিঠা। এই পিঠা গুলো শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে এবং এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি লক্ষ করা যায়। শহরের আনাচে কানাচে রাস্তার পাশে বিভিন্ন স্টল গুলোতে ভাপা পিঠার আয়োজন দেখতে পাওয়া যায় যার কারিগর অধিকাংশ মহিলা। রাস্তার পাশে ইত্যাদি স্থানে ভাপা পিঠার শ্বাদ নিতে মানুষ ভিড় জমায় এবং নতুন খেজুরের গুড়ের সাধে চালের গুড়ু দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা খেতে অনেক মজা। ঘরে ঘরে দুধ চিতই পিঠা গুলো বেশ জনপ্রিয় দুধ চিতই পিঠা গুলো খেতে যেমন মজা দেখতেও তেমন সুন্দর লাগে তবে দুধ দিয়ে তৈরি পিঠা রসালো ভাব ঘরে ঘরে বয়ে আনে আনন্দের উল্লাস।

পিঠা উৎসবের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

পিঠা উৎসব রচনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। শীতকালীন সময়ে পিঠার উৎসবের বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এরকম সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম যেমন আবহাওয়ার প্রতি সম্মান, পারিবারিক সম্পর্ক, স্থানীয় সংস্কৃতি প্রচার, সামাজিক ঐক্য মিলন ঘটন, সৃজনশীল, অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ইত্যাদি কার্যকলাপ এর মাধ্যমে পিঠা উৎসবের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ভেসে উঠে।
পিঠা-উৎসবের-সামাজিক-ও-সাংস্কৃতিক-তাৎপর্য
শীতরে শুরুতে আবহওয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে উৎযাপন শুরু। উৎসবের সময় পারিবারিক সর্ম্পক জেগে উঠে একে অন্যের পিঠা উৎসবের ভালোবাসায়।জেলা ভিত্তিক গ্রাম্য অনুষ্ঠানে স্থানিয় সংস্কৃতি প্রচার ফুঠে উঠে পিঠার উৎসবের মধ্য দিয়ে। যনে যনে পিঠার উৎসবে একে অন্যের মিলনে সামাজিক ঐক্য মিলন ঘটে। পিঠার তৈরির সৃজনশীলতা ক্ষমতা মানুষের মাঝে তৈরি হয়। স্থানিয় বাজারে পিঠা বিক্রির মাধ্যমে গ্রামীন অর্থনৈতিক বৃদ্ধি পায়।

পিঠা উৎসবের পরিবর্তন এবং আধুনিক প্রেক্ষাপট

পিঠা তৈরির উৎসবের গ্রামিন পরিবেশ থেকে বর্তমানে আধুনিক শহরে পিঠার উৎসব ভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।পিঠা তৈরির উৎসবের যুগে যুগে পরিবর্তন হয়ে আসছে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক উৎসবে যেমন মেলা এরকম উৎসবে বিভিন্ন পিঠা প্রদর্শন হয়ে থাকে। গ্রামীন পরিবেশ থেকে শুরু করে বর্তমান শহরের পিঠার আধুনিক প্রেক্ষাপট পরিলক্ষিত দেখা যায়। 

বিভিন্ন ফাস্টফুড দোকান গুলোতে বর্তমানে পিঠার তৈরির উপকরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্যরকম পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। শহর গুলোতে পিঠার বেশি প্রচলন না থাকায় অনলাইনের মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য অনেকে ব্যবসায় কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত করছে। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে শহর গুলোতে পিঠার আয়োজন বেশি দেখা যাচ্ছে আধুনিক প্রেক্ষাপট দিনে দিনে পরিবর্তন হওয়ার ফলে পিঠা উৎসবের আধুনিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পিঠা উৎসবের চ্যালেঞ্জ সংরক্ষন পদ্ধতি

পিঠা উৎসব রচনা প্রতিবেদন করে দেখা যায় যে বর্তমান সময়ে পিঠার ঐতিহ্য রক্ষা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রামিন পরিবেশের সেই পিঠার আমেজটি সহরে দেখা যায় না। ব্যাস্ত শহরে পিঠার শ্বাদ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে এখনো অনেকে অজ্ঞাত রয়েছে তাই আমাদের উচিত হবে পিঠার প্রচলন বৃদ্ধি করার জন্য শহরে ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির কার্যক্রম প্রচলন করতে হবে এবং এটাই বর্তমান পরিপেক্ষিতে প্রকাশ পাচ্ছে শহরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই উৎসবটি শহরে প্রতি বছর বাণিজ্যিক আকারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে যেহেতু বাণিজ্যিক আকারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সেহেতু শহর গুলোতে বাণিজ্যিক উৎসব গুলোতে ব্যাপক ভাবে পিঠার আয়োজন করতে হবে তাহলে মানুষের মাঝে পিঠার লোভনিয় শ্বাদ উপভোগ করার সুয়োগ তৈরি হবে সাথে তৈরির বিষয়টিতে প্রচার উৎসাহিত সংরক্ষন হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হবে।তবে বর্তমানে শহরের পিঠা তৈরির চ্যালেঞ্জ দেখা যায় শহরের বাণিজ্য মেলা ইত্যাদি বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গুলোতে একে অন্যের চেয়ে বেশি রকমারি পিঠা তৈরির পদ্ধতি গুলো প্রকাশ পায় এবং মানুষ নতুন পিঠার শ্বাদ নিতে মেলা গুলোতে ভিড় করে।

উপসংহার

বর্ণিত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে ঐতিহ্য বাহি এই সংস্কৃতি আমাদের বাঙ্গালীর সম্প্রীতির প্রতীক। প্রাচীন যুগ থেকে বয়ে আসা এই উৎসব আমরা আমাদের সামাজিক সংস্কৃতিতে আকড়ে ধরে রাখতে হবে। আগামী নতুন প্রজন্মের জন্য উৎসবটি যেন হারিয়ে না যায় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শেষ কথা

পিঠা উৎসব রচনা ও পিঠার রচনার বিভিন্ন ক্যাটাগরি বিষয় নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা ব্যাক্ত করা হয়েছে। আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের সাথেই থাকবেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমূলক আর্টিকেল আমরা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকি। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নেক্সাস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url