রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ - মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ আমাদের সকল কে জানতে হবে। আপনি কি করলে রোজা ভঙ্গ হয় এই বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

রোজা-ভঙ্গের-কারণ-সমূহ-মেয়েদের-রোজা-ভঙ্গের-কারণ

মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহও জানা উচিৎ। কেননা রোজা করলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই কি করলে রোজা ভেঙ্গে যায় তা জেনে অবশ্যই সিয়াম পালন করতে হবে। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোজা হলো আত্মশুদ্ধির ঢাল। যা আমাদের সকল পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। এ জন্য সারা দিন না খেয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়। এর সওয়াবও রয়েছে অনেক। যদি এই রোজা কোনো ভাবে ভেঙ্গে যায় তাহলে আমাদের সকল কষ্ট বিফলে যাবে। তাই সেই কারণগুলো জানতে হবে। নিম্নে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

  • ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু খাওয়া
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি বা মুখ ভর্তি বমি করা
  • নাক দিয়ে কিছু টানা
  • ইনজেকশন বা স্যালাইন নেওয়া
  • ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত করা
  • রক্ত গড়িয়ে পড়লে

ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু খাওয়াঃ ভুলবশত কেও যদি কোনো কিছু খেয়ে ফেলে তাহলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কিছু খায় তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে।

ইচ্ছাকৃতভাবে বমি বা মুখ ভর্তি বমি করাঃ অনেক সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করা যায়। যদি কেও নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তাহলে তার রোজা থাকবে না, ভেঙ্গে যাবে। আর অনেক বেশি বা সম্পূর্ণ মুখ ভর্তি করে বমি হলেও রোজা থাকবে না।

নাক দিয়ে কিছু টানাঃ নাকে যদি সরাসরি কিছু প্রবেশ করানো হয় আর তা যদি পাকস্থলী পর্যন্ত চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যেতে পারে।

ইনজেকশন বা স্যালাইন নেওয়াঃ কোনো ইনজেকশন বা স্যালাইন যদি পুষ্টি সরবরাহ বা শক্তি যোগানের জন্য যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে রোজা ভেঙে যায়।

ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত করাঃ যদি কেউ হস্তমৈথুন, যৌন উত্তেজনাপূর্ণ কিছু দেখে বা অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।

রক্ত গড়িয়ে পড়লেঃ যদি কোনো কারণে শরীর থেকে রক্ত বের হয় আর সেই রক্ত যদি গড়িয়ে পড়ে তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

এছাড়া আরও কিছু কারণ হলোঃ

  1. ইসলাম ত্যাগ করা
  2. ইফতারের সময় সূর্যাস্তের আগে কিছু খেয়ে ফেলা
  3. হালকা বমি উঠে তা আবার গিলে ফেললে
  4. প্রস্রাব বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ দিলে
  5. কান দিয়ে ওষুধ দিলে
  6. ভুলে কিছু খেয়ে সন্দেহ করে আবার কিছু খেয়ে ফেললে
  7. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা গিলে ফেললে
  8. সুবহে সাদিকের পর খেলে রোজা হয় না
  9.  জোর করে কেও কিছু খাওয়ালে
  10. যা খাওয়া যায় না এমন কিছু খেয়ে ফেললে যেমনঃ মাটি, কাগজ, তৃণলতা ইত্যাদি।

রোজা ভঙ্গের কারণ হাদিস

রোজা ভঙ্গের কারণ হাদিস বা রোজা ভঙ্গ নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানতে এই হাদিস জানা উচিৎ। একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই আমাদের সেগুলো জেনে থাকতে হবে। কারণ বর্তমান সমাজে অনেক মন বানানো হাদিস বা প্রচলন দেখা যায়। যেগুলো ইসলামে নাই তবুও অনেকে ভুল ধারনা নিয়ে থাকেন। তাই যেকোনো হাদিস ও সেটি সহিহ নাকি জাল তা জানতে হবে স্পষ্টভাবে। নিম্নে এরকম কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলোঃ

স্ত্রী সহবাসঃ এক ব্যাক্তি রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে বললেন, " ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি ধ্বংস হয়েছি। তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, "কি তোমাকে ধ্বংস করলো?" তখন ওই ব্যাক্তি বললেন, "আমি রমজানে (দিনের বেলা) সহবাস করে ফেলেছি।" তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, "তুমি কি কোনো ক্রিতদাস কে আযাদ করতে পারবা?" তিনি বললেন "না।" আবার জিজ্ঞাস করলেন "তুমি কি টানা ২ মাস রোজা রাখতে পারবা?" তিনি বললেন "না।" আবার জিজ্ঞাস করলেন, "তুমি কি ৬০ জন মিসকিন কে খাওয়াতে পারবা?" তিনি আবার বললেন "না।".... (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)

এই থেকে আমরা জানতে পারি, যদি কোনো ব্যাক্তি রোজা অবস্থায় সহবাস করে ফেলে তাহলে তো তার রোজা থাকবে না। বরং এটি একটি বড় পাপ হয়ে যাবে। তাই এই কাজ করার ফলে তাকে কাফফারা স্বরূপ ক্রিতদাস কে আযাদ অথবা টান ২ মাস রোজা অথবা ৬০ জন মিসকিন কে খাওয়াতে হবে। তাই এই কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে রোজা অবস্থায়।

পানাহার করাঃ এই বিষয়ে একটি হাদিস পাওয়া যায়। আমরা জানি কোনো কিচু খেলে রোজা ভেঙ্গে যায়। যদি নাক দিয়েও আমাদের পাকস্থলীতে কিছু যায় তাহলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। এর হাদিস টি হলোঃ নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "ভালো করে তুমি নাকে পানি দাও, যদি তুমি রোজাদার না হও" (সুনানে তিরমিযি)। এটি দ্বারা আমরা বুঝতে পারি ওযু করার সময় বা যেকোনো সময় যদি নাক দিয়ে পানি আমাদের ভিতরে চলে যায় তাহলেও আমাদের রোজা ভেঙ্গে যাবে।

শিঙ্গা লাগানোঃ এই বিষয়ে রাসুল (সাঃ) বলেন, " রোজা অবস্থায় যে ব্যাক্তি শিঙ্গা লাগায় এবং যার লাগানো হয় উভয়েরই রোজা ভেঙ্গে যাবে" (সুনানে আবু দাউদ)। অর্থাৎ রোজা অবস্থায় এই কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও এটি অনেকের খুবই প্রয়োজনীয় হতে পারে যদি সে অসুস্থ হয়ে থাকে। কিন্তু কোনো ভাবেই রোজা থাকলে এটি করা যাবে না।

মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ

মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ রয়েছে। সেগুলো প্রত্যেক মেয়েকে জানতে হবে। সাধারণত যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে তা নিয়ে আমাদের সকল কে অবগত থাকতে হবে। কিন্তু মেয়েদের জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু নির্দেশনা। তাদের অতিরিক্ত যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে সেগুলোও জেনে থাকতে হবে। সেগুলো হলোঃ
মেয়েদের-রোজা-ভঙ্গের-কারণ
মাসিক (ঋতুস্রাব) শুরু হওয়াঃ রোজা চলাকালীন যদি মাসিক শুরু হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। অর্থাৎ রমজান মাসে মাসিক শুরু হলে রোজা রাখা যাবে না। এরপর পবিত্রতা অর্জন করে এই রোজা কাজা করে আদায় করতে হবে।

প্রসূতি রক্তস্রাব অর্থাৎ নিফাস হওয়াঃ সন্তান জন্মের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মেয়েদের রক্তস্রাব হয়। সেই নির্দিষ্ট তা চলাকালীন রোজা রাখা নিষিদ্ধ এবং এটি রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। তাই এ সময় রোজা রাখা যাবে না।

গর্ভধারণকালীন গুরুতর অসুস্থতা বা দুর্বলতাঃ গর্ভবতী নারী যদি রোজা রাখার কারণে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করেন বা অসুস্থ হন তবে রোজা ভঙ্গ করতে পারবে। পরে কাজা করতে হবে। শুধু এটি না যেকোনো অনিচ্ছাকৃত গুরুতর অবস্থায় এটি করা যাবে।

সুবহে সাদিকের পর মাসিক বা নিফাস বন্ধঃ যদি কোনো নারীর সুবহে সাদিকের পর মাসিক বা নিফাস থেকে পবিত্রতা অর্জন করে এবং সে রোজার নিয়ত করে তাহলে সেই রোজা হবে না। কারণ রোজার শুরুরান্তে অপবিত্র ছিলো। তাই তাকে সেই রোজার কাযা আদায় করা লাগবে।

সাওম মাকরুহ হওয়ার কারণ

সাওম মাকরুহ হওয়ার কারণ অনেক কারণ রয়েছে। রোজা মাকরুহ বলতে বোঝায় রোজা ঢিলা হওয়া। অর্থাৎ রোজা ঢিলা হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। যা আমাদের অসাবধানতার কারণেও হয়ে থাকে। রোজার ক্ষেত্রে মাকরুহ হলো ২ প্রকার। যথাঃ মাকরুহে তাহরিমি, যা করা হারামের কাছাকাছি (যেমন মিথ্যা বলা, গিবত করা, ঝগড়া করা)। অপরটি হলো মাকরুহে তানজিহি, যা অপছন্দনীয় কিন্তু গুরুতর নয় (যেমন বারবার থুথু গিলে ফেলা বা অতিরিক্ত কুলি করা)।

সাওম মাকরুহ হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. অতিরিক্ত ঘুমানোঃ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পুরোদিন ঘুমিয়ে কাটায় এবং ইবাদত বা নামাজে গাফিলতি করেন, তবে তার রোজা মাকরুহ হতে পারে।
  2. খাবারের স্বাদ বা লবণ দেখাঃ যদি কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে খাবারের স্বাদ বা লবণ পরীক্ষা করেন, যদিও গিলে না ফেলে। তবে এটি মাকরুহ। তবে বিশেষ প্রয়োজনে (যেমন রান্নার সময় লবণ ঠিক আছে কি না দেখা) গিলে না ফেললে অসুবিধা নেই। কিন্তু এটি না করায় উত্তম।
  3. নাপাক পোশাক বা অবস্থায় থাকাঃ যদি কেও ইচ্ছাকৃতভাবে অপবিত্র অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং পবিত্রতা অর্জনের চেষ্টা না করেন, তবে এটি মাকরুহ হবে।
  4. কোনো কিছু চিবানোঃ যেমন চুইংগাম, পানের পাতা ইত্যাদি বিনা প্রয়োজনে চিবানো উচিৎ না যদিও এটি গিলে ফেলা হয় না। তবুও এটি রোজার আদবের বিরুদ্ধে। তাই এটি থেকে বিরত থাকতে হবে।
  5. ঘন ঘন কুলি করা বা নাকে পানি নেওয়াঃ যদি এতে পানি গলার ভেতর চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে এটি মাকরুহ। তাই এই কাজে সতর্ক থাকতে হবে বা না কারায় উত্তম হবে।
  6. কথা বা কাজে অসতর্কতাঃ অশ্লীল কথা, মিথ্যা বলা, গিবত করা এসব কাজ রোজার আত্মিক ফজিলত নষ্ট করে এবং সওয়াব কমিয়ে দেয়। তাই এটি মাকরুহ হবে এবং এসন নোংরা কাজ থেকে সচেতন থাকতে হবে।
  7. অযথা ঝগড়া করা বা রাগান্বিত হওয়াঃ রোজার মূল উদ্দেশ্য সংযম শেখা, তাই রাগ করা বা ঝগড়া করা রোজার মূল্য কমিয়ে দেয়। ফলে রোজা মাকরুহ হতে পারে।
  8. নিজের লালারস মুখে জমা করে গিলে ফেলাঃ স্বাভাবিকভাবেই থুথু বা মুখের ভিতরের লালা গিলে ফেলা রোজার ক্ষতি করে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি করে জমিয়ে গিলে ফেলা মাকরুহ।
  9. মিথ্যা কথা বলা বা প্রতারণা করাঃ রোজা শুধু না খেয়ে থাকার নাম নয়, বরং সমস্ত খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। মিথ্যা বললে রোজার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। এটি করা মহাপাপ। তাই রোজা অবস্থায় এ কাজ কোনো ভাবেই করা যাবে না।
  10. কোনো সুগন্ধি বা ধোঁয়া গ্রহণ করাঃ সরাসরি নাক দিয়ে কোনো সুগন্ধি বা ধোঁয়া ইচ্ছাকৃত ভাবে গ্রহণ করে তবে এটি মাকরুহ হয়ে যেতে পারে। কারণ এটি নাক দিয়ে আমাদের পাকস্থলী পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না

কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না এই সম্পর্কে আমাদের ধারনা বা জেনে থাকা দরকার। রোজা রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানার পাশাপাশি যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না এ বিষয়ে জানতে হবে। ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক বিশেষ বা অনেক কিছু কারণ আছে যার কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু আমাদের সকলের এসব সঠিক বিষয় ও কারণ না জানার কারণে সন্দেহ থেকে যায়।

কি-কি-কারণে-রোজা-ভঙ্গ-হয়-না

ভুলে মুখে কিছু চলে গেলেঃ অনেক সময় কথা বলতে বলতে বা যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে মুখে ধুলোবালি বা পোকা-মাকড় চলে যায়। আমাদের মুখে অনিচ্ছাকৃতভাবে এসব কিছু মুখে চলে যায়। এর ফলে রোজা ভঙ্গ হবে না। এরকম হলে ভালোভাবে পানি দিয়ে কুলি করে নিতে হবে।

রাত্রে সহবাসের পর গোসল না করলেঃ রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস না করা গেলেও রাত্রে এটি করা যাবে। কারণ তখন রোজা অবস্থায় থাকা হয় না। রাত্রে স্ত্রী সহবাস করে যদি গোসল না করে বা নাপাক থাকা অবস্থায় সেহেরী খায় তবুও কোনো সমস্যা হবে না।

রোজার দিনে স্ত্রীর সাথে চুম্বন করলেঃ রোজার দিনে রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে চুম্বন করতে পারে বা চুমু খেতে পারে। এর ফলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

যৌন চিন্তার ফলে বীর্যপাত হলেঃ অনেক সময় রোজা থাকা অবস্থায় মাথায় উল্টা-পাল্টা চিন্তা আসে, যা আমাদের যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এর ফলে রোজা থাকা অবস্থায় বীর্যপাত হয়ে যায়। এরকম হলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

রোজা অবস্থায় মেসওয়াক করলেঃ অনেকে মনে করে রোজা অবস্থায় মেসওয়াক করা যায় না। এর ফলে রোজার ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। রোজা করে মেসওয়াক করা যাবে এর ফলে রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না। এমনকি ইফতারের আগেও মেসওয়াক করলে কোনো সমস্যা নাই।

স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ

স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ? এটি খুবই জিজ্ঞাসিত একটি বিষয়। অনেকের অজানা যে, স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভঙ্গ হয় কি না বা রোজার কোনো ক্ষতি হয় কি না? এছাড়া রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে গেলে করনীয় কি? এই বিষয়গুলি নিয়ে অনেকে জানি বা অনেকে ভুল ধারনা করে থাকি। তাই আমাদের সঠিক টা জানতে হবে। ইসলাম নিয়ে কোনো ভুল কিছু ধারন করে থাকা যাবে না। চলুন সেটি জেনে নিই।

স্বপ্নদোষ হলো স্বতঃস্ফূর্ত শারীরিক বিজ্ঞানগত এক প্রক্রিয়া, যা ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত কে বলা হয়। এটি সাধারণত ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ঘটে থাকে। যদি কারো শরীরে বেশি বীর্য উৎপন্ন হয়ে থাকে তাহলে এটি হয়ে থাকে। এমনকি স্বপ্নের মধ্যে যৌন উত্তেজনা মূলক কিছু দেখলেও এটি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর ফলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কি না?

সঠিক উত্তর হলো না। এরকম হলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না রোজা ভঙ্গও হবে না। এটি একটি শররের প্রাকৃতিক ক্রিয়া। এর ফলে রোজা ভঙ্গ হবে না এবং এর জন্য কোনো কাফফারাও দেওয়া লাগবে না। এটি কোনো চিন্তার কারণ নয়। কিন্তু করনীয় হলো নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জন করা এবং স্বাভাবিক ভাবে নিজ কাজ করা।

চুল, নক কাটলে কি রোজা ভাঙ্গে

চুল, নক কাটলে কি রোজা ভাঙ্গে? এই রকম প্রশ্ন বা সন্দেহ অনেকের থাকে। চুল বা নক কাটলে রোজা ভাঙে না। রোজার জন্য যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে, তা হলো– সেহরি ও ইফতারের সময়ের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করা, পান করা, সহবাস করা বা অন্য যেকোনো কিছু খাওয়া বা পান করা। চুল বা নক কাটলে শরীরের কোনো অংশে পুষ্টি প্রবাহিত হয় না বা খাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটে না, তাই এর মাধ্যমে কনো রকম রোজাও ভাঙে না। 

তবে ইসলামিক শরিয়ত অনুযায়ী, রোজা থাকাকালীন সময়ে চুল কাটানো বা নক কাটার কোনো ধরনের ধর্মীয় বিধি নিষেধ নেই। তবে এটি করা সঠিকভাবে উপদেশযোগ্য নয় যদি এর ফলে রোজার মধ্যে কোনো অন্যথা সৃষ্টি হয়ে যায়, যেমনঃ অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়া বা গাঢ়ভাবে নিজের মনোযোগ অন্যদিকে চলে যাওয়া ইত্যাদি। 

কিছু মানুষ মনে করতে পারেন যে চুল কাটার পর রোজা হালকা অশুদ্ধতা হতে পারে বা এটা অনুভব করা থাকতে পারে, কিন্তু এটি অর্থাৎ চুল কাটা রোজার কোনো শর্তের মধ্যে প্রভাব ফেলে না। অতএব, চুল বা নক কাটলে রোজা কোনোভাবেই ভাঙবে না, তবে রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের বা মনোযোগের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যাতে আমাদের মনোযোগ এ কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

রোজা অবস্থায় করনীয়

রোজা অবস্থায় করনীয় অনেক রয়েছে। তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করনীয় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ রমজান মাসে রোজা রাখা বা সিয়াম পালন করা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রোজা অবস্থায় কিছু বিশেষ বিষয় অনুসরণ করা রোজাদারদের জন্য জরুরি, যাতে ইবাদত সঠিক হয় এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা হয়।

রোজা অবস্থায় সেহরি এবং ইফতার সময় সঠিকভাবে মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনের রোজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, তাই সবার সময়মতো সেহরি খাওয়া উচিত। আর ইফতারের সময়ও সূর্যাস্তের সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ইফতার করাও অনেক জরুরী। ইফতারের সময় দোয়া পড়া, বিশেষ করে “আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু” এই দোয়া পাঠ করা উত্তম।

রোজা অবস্থায় শুধু খাওয়া-দাওয়ায় ত্যাগ করা নয়, বরং খারাপ বা মন্দ কাজ যেমন মিথ্যা কথা বলা, গালি দেওয়া, ঝগড়া করা, অহংকার করা বা যেকোনো গুনাহের কাজ করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। রোজা শুধুমাত্র শরীরের ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং মানুষকে আধ্যাত্মিক ভাবে বিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যেও পালন করা হয়ে থাকে।

রোজা অবস্থায় অনেক বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া এবং ইবাদত করা উচিত। এই মাসটিতে আল্লাহর রহমত বেশি বর্ষিত হয়, তাই বেশি করে নফল নামাজ আদায় করা, দান-খয়রাত এবং মসজিদে গিয়ে বেশি করে ইবাদত করা উচিত। রমজান মাস হলো আল্লাহর কাছে কাছাকাছি যাওয়ার সময়, সুতরাং এই মাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সকল্কে দ্বীনের পথে আসতে হবে।

রোজা নিয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ ৬টি। যথাঃ

  1.  ইচ্ছাকৃত ভাবে খেলে বা পান করা
  2. সহবাস করা (স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলন)
  3. ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করা বা মুখ ভর্তি বমি হলে
  4. ওষুধ বা ইনজেকশন গ্রহণ
  5. অস্বাভাবিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হওয়া বা রক্ত গড়িয়ে পরলে
  6. মানসিক অক্ষমতা হলে।

প্রশ্নঃ রক্ত বের হলে রোজা ভেঙ্গে যায় কি?

উত্তরঃ না।  রক্ত বের হলে রোজা ভাঙে না, তবে যদি রক্তদান করার সময় বা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে শরীরে শক্তি বা পুষ্টির অভাব না হয়, তাহলে রোজা অব্যাহত থাকবে।

প্রশ্নঃ চুম্বন করলে কি রোজা ভেঙে যায়?

উত্তরঃ চুম্বন করলে যদি কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয় বা ইন্দ্রিয়গত আনন্দ হয়ে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি শুধু চুম্বন করা হয় এবং কোনো নির্ধারিত শারীরিক পরিবর্তন না ঘটে থাকে, তাহলে রোজা ভাঙে না।

প্রশ্নঃ বমি করলে কি রোজা ভঙ্গ হয়?

উত্তরঃ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করা হয় বা মুখ ভরে বমি হয় তাহলে রোজা ভেঙে যায়। তবে, যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে বমি হয়, তাহলে কোনো ভাবে রোজা ভাঙবে না।

প্রশ্নঃ ইসলামে সর্দি হলে কি রোজা রাখা উচিত?

উত্তরঃ ইসলামের মতে সর্দি হলে রোজা রাখা উচিত, যদি শরীর এটা সহ্য করারা ক্ষমতা রাখে। তবে, যদি অসুস্থতা অত্যন্ত বেশি হয় বা রোজা রাখা অনেক কষ্টকর হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা না রাখার অনুমতি ইস্লামে রয়েছে।

শেষকথা

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ নিয়ে আজকে আপনাদের সামনে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা সকল বিষয় ভালো করে বুঝতে পেরেছেন। এই রোজা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা আমাদের জন্য বছরে একবার ফরজ রূপে আসে। এই সময় আমাদের অনেক সতর্কতা অবলম্বন ও সিরিয়াস থাকা উচিৎ। 

তাই এই বিষয়ে আমাদের জেনে থাকা উচিৎ। আজকের আর্টিকেলে কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের আর্টিকেল যদি ভালো লেগে থাকে এবং বিভিন্ন তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী থাকলে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করতে পারেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নেক্সাস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url